মা-ছেলের যুদ্ধ, ৫ নেতাকে লন্ডনে ডেকেছেন তারেক!

বেগম জিয়ার কারান্তরীণ হওয়ার পরও সরকারের সঙ্গে লড়াইটা জমেনি বিএনপির। সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ না হলে কি হবে, দলের মধ্যে যুদ্ধটা ভালোই শুরু হয়েছে। আর এবারের দ্বৈরথটা জিয়া পরিবারের সঙ্গে অন্য নেতাদের নয়। খোদ জিয়া পরিবারের মধ্যেই। এখন লড়াইটা সরাসরি বেগম জিয়া আর তারেক জিয়ার মধ্যেই। খবর বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর।
বেগম জিয়া চান যেকোনো মূল্যে তাঁর মুক্তি। অন্যদিকে তারেক জিয়া চান, মাকে কারান্তরীণ রেখে সরকারের পতন। মা–ছেলের এই দ্বৈরথে বিভক্ত বিএনপিও। তারেক আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করতে দলে তাঁর ঘনিষ্ঠ পাঁচ নেতাকে লন্ডনে ডেকেছেন। অন্যদিকে, বেগম জিয়া তাঁর মুক্তির জন্য যা করা দরকার তা করার ‘ ব্লাংক চেক’ দিয়েছেন তাঁর ভাইকে।
বেগম জিয়া এবং তারেকের দ্বন্দ্ব কিন্তু নতুন নয়। ২০০১ কিংবা তাঁর আগে থেকেই এই দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের কারণেই তারেক জিয়া তাঁর মামা প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দার থেকে আলাদা হয়ে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। এই দ্বন্দ্বের কারণেই বেগম জিয়ার একান্ত সচিব মোসাদ্দেক আলী ফালুর বদলে তারেক হারিস চৌধুরী তৈরি করেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এলে, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিপরীতে তারেক জিয়া তৈরি করেন ‘হাওয়া ভবন’। মন্ত্রিসভায় বেগম জিয়ার একজন মন্ত্রীর বিপরীতে তিনি বসান একজন করে প্রতিমন্ত্রী।
ক্ষমতাচ্যুত হবার পর কিছুদিন শান্ত ছিল তারেক। অনেকরই ধারণা ছিল, মা-ছেলের মিলমিশ হয়ে গেছে। কিন্তু ২০১২’র পর থেকে আবার তারেক দলের নেতৃত্ব নিতে শুরু করে। শুরু হয় আবার ঠাণ্ডা লড়াই।
জানা যায়, ২০১৪’র আন্দোলন পরিকল্পনা পুরোটাই ছিল তারেকের। এতে সায় না থাকলেও, ছেলের চাপেই কর্মসূচি দেন বেগম জিয়া। এরপর দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনে তারেক একছত্র কর্তৃত্ব নেন।২০১৭ সাল থেকে তারেকই বিএনপির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। বেগম জিয়া পুতুলমাত্র।
এসব হলো অতীত প্রেক্ষাপট। বর্তমানে মা ছেলে দ্বন্দ্ব বেগম জিয়ার জেলকে কেন্দ্র করে। মামলা এড়াতেই বেগম জিয়া লন্ডন গিয়েছিলেন। লন্ডন থেকে দেশে ফিরে না আসার ব্যাপারেও তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তারেক জিয়া একরকম জোর করেই বেগম জিয়াকে দেশে পাঠান।
তারেক তাঁর মাকে আশ্বস্ত করছিল যে, সে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে ফেলবে। তাঁর কিছুই হবে না। কিন্তু মামলার রায় হলো। বেগম জিয়া গ্রেপ্তারও হলেন। প্রায় এক মাস হতে চলল, বিএনপি চেয়ারপারসন জেলে। বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি রাস্তার লড়াই বা আইনি লড়াই কোনোটাই করতে পারেনি।
কারাগারে বিধ্বস্ত খালেদা জিয়া তাঁর মুক্তি চান। এজন্য সরকারের সঙ্গে আপোষ রক্ষার জন্য তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তারেক জিয়া এতে রাজি নন। বেগম জিয়াকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন তারেক। তারেক চাইছেন, বেগম জিয়া আরও কিছু দিন জেলে থাকুক। এতে বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়বে। ‘একটা কিছু ঘটানো’ সহজ হবে।
কিন্তু বেগম জিয়া তাঁর আত্মীয়দের নির্দেশ দিয়েছেন সমঝোতার। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ দলের প্রায় সব সিনিয়র নেতাই বেগম জিয়ার পক্ষে। এজন্যই তাঁরা সমঝোতার বিঘ্ন না হয়, এমন মুখ রক্ষার কর্মসূচি দিচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারেক তাঁর আস্থা ভাজন পাঁচ নেতাকে লন্ডনে ডেকে পাঠিয়েছেন। যাদের লন্ডনে ডাকা হয়েছে, তাঁরা হলেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট মাহাবুব উদ্দিন খোকন, শওকত মাহমুদ এবং ব্যারিস্টার রুম্মান ফারহান।
মা ছেলের প্রকাশ্য বিরোধ বিএনপিতে কি পরিণতি আনে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র-বাংলা ইনসাইডার
বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম/জিএম