সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার (০৫ মে) এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের রায়ে এ-সংক্রান্ত আদেশ দেওয়া হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে এই সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আর জাতীয় সংসদের সদস্যদের হাতে থাকল না।
দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল।
এ মামলায় আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ ছাড়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। পরে সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে এ রিট আবেদন দায়ের করেন।
এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
পরে গত বছরের ২১ মে রুলের শুনানি শুরু হয়। চলতি বছরের ১০ মার্চ এ রুলের শুনানি শেষে ৫ মে রায়ের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
এদিকে, গত ২৫ এপ্রিল অসদাচরণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাঁকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামরিক ফরমান দিয়ে আমাদের সংবিধানের যে বিধানগুলো পরিবর্তন করা হয়েছিল, সেগুলো বাতিল করাই হলো আমাদের পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সেটা বাতিল করে বাহাত্তরের সংবিধানে আমরা ফিরে গেছি।’
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানির বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারকের অপসারণের বিধানটি ছিল। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ে আপিল বিভাগও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওই বিধান সুরক্ষা দিয়েছিলেন। এ সুরক্ষার পর পঞ্চদশ সংশোধনী যখন পাস হয়, তখন সংসদ ওই ৯৬ অনুচ্ছদকে সংরক্ষিত করেছিল।’
‘হঠাৎ করে কিছুদিন পরে ৯৬ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে এ ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ পরিবর্তন হয়েছে সংবিধানের মৌল কাঠামোকে পরিবর্তন করে। কারণ, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে থাকা ৭(বি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মৌল কাঠামো পরিবর্তন করা যাবে না।’
বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম/জিএম