আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১১:৩৩

বিজয়ের ৪৪ বছর উদযাপনে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
বিজয়ের ৪৪ বছর উদযাপনে বাংলাদেশ

মঙ্গলবার বিজয়ের ৪৪ বছরে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে  মাটির মুক্তির জন্য প্রাণ দেওয়া ৩০ লাখ শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে দেশবাসী।

দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণীতে দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। তবে বিএনপি নেত্রী বলেছেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এখন বিপন্নের পথে।

১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রাম শুরুর পর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন যুদ্ধে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী।

চার যুদ্ধপরাধরি ফাঁসি কার্যকরের পর এবারের বিজয় দিবস কিছুটা ভিন্ন মাত্রায় পালন করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বিজয়ের এই দিনের কর্মসূচি শুরু হয় সকালে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে (পুরনো বিমানবন্দর) ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। তারপরের কর্মসূচি আবর্তিত হয় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সূর্যোদয়ের পরপরই স্বাধীনতার স্মারকে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

ভিআইপিদের শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠতে থাকে স্মৃতিসৌধ।

স্মৃতিসৌধের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই সকাল ১০টায় রাজধানীতে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শুরু হবে কুচকাওয়াজ। এই কুচকাওয়াজের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন মহড়া চলবে, যার প্রস্তুতি চলছে গত কয়েকদিন ধরে।

রাষ্ট্রপতি ওপ্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম নেবেন।

বিজয় দিবস উপলক্ষে নৌ-বাহিনীর জাহাজগুলো সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা নেভাল জেটি, চট্টগ্রামের নিউমুরিং নেভাল জেটি, খুলনার বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাট, মংলার নেভাল বার্থ এবং বরিশালের বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহাজ পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

নানা কর্মসূচিতে বিজয়ের এই দিন উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিজয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বিজয় উদযাপনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের আহ্বানে ‘কোটি কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের’ মাধ্যমে এবারের বিজয় দিবস উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে ‘বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি’।

বিকাল ৪টা ৩১মিনিটে সারা দেশে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

এ বছর দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-গ্রামসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিকাল ৪টা ৩১মিনিটে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পাশাপাশি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় কমিটি।

তাদের আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় উৎসবের উদ্বোধন হবে সকাল ১১টায়, উদ্বোধন করবেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।

পরে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘আমাদের সংস্কৃতি’। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টায় থাকছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব।

বিকাল ৪টা ৩১মিনিটে কোটি কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে হবে ‘আগামী বাংলাদেশের শপথ’। শপথবাক্য পড়াবেন বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আবদুল গাফফার চৌধুরী।

বিকাল ৪টা ৪৭মিনিট থেকে ৫টা ১৫মিনিট পর্যন্ত চলবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধের গান। এরপর আছে ‘বিজয় আতশ সন্ধ্যা’।

সবশেষে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিজয় মঞ্চে হবে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদলের অংশগ্রহণে ‘কনসার্ট ফর ফ্রিডম’।

১৯৭১ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের সেই ক্ষণ এবারও উদযাপন করবে একাত্তরে রণাঙ্গনে বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া কমান্ডারদের সংগঠন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।

স্বাধীনতা স্তম্ভে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য মঞ্চায়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকবে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোর আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সকাল ১০টায় এটি শুরু হবে। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় যাত্রাপালা ‘আনারকলি’ পরিবেশন করবে যাত্রাদল ‘লোকনাট্য গোষ্ঠী’।

বিজয় দিবসের সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী অন্যান্য কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দলের পক্ষ থেকে সাভার স্মৃতিসৌধ, ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দেওয়া হবে। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের পাশাপাশি তার কবর জিয়ারতও করা হবে।

ঢাকা মহানগরীর সব থানা শাখা বিজয় র‌্যালি নিয়ে পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে। সেখানে ৪টা ২০ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিজয় মিছিল যাবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে।

এছাড়া ১৭ ডিসেম্বর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা রয়েছে দলটির, যেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান ভবনে পতাকা উত্তোলন, এরপর সাভারে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পনের কর্মসূচি রয়েছে।

বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছায়ানটের উদ্যোগে জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ‘বিজয় উৎসব’ উদযাপন হবে। ছায়ানট, সংগীত বিভাগসহ নবীন-প্রবীণ চার হাজার শিল্পী এতে অংশ নেবেন বলে আশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জোহরের নামাজের পর মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের উন্নতির জন্য দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম/এআর

 

উপরে