রাজধানীর ২৫ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছে

রাজধানীর প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছে। বায়ুদূষণের কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের সমস্যাও বাড়ে। রাজধানী ও এর আশপাশের অনিয়ন্ত্রিত ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া এবং ট্যানারি ও অন্যান্য উৎসের বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে ঢাকার বাসিন্দাদের ফুসফুসের সমস্যা বাড়ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা
দেশ ইউনিভার্সিটিতে স্থাপিত আরবান ল্যাব পরিচালিত ‘নাগরিক স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার ফল গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে উপস্থাপন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (বিইউ) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
গবেষণা ফল উপস্থাপন করেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক রুহুল আমিন। তিনি জানান, ঢাকার বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পার্টিকেল ম্যাটার বা পিএম-২.৫) পরিমাণ ২০৯ পিএম, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ। কারণ, প্রতি ঘনমিটারে পিএমের স্বাভাবিক মাত্রা ১ থেকে ১২ পর্যন্ত।
গবেষণায় রাজধানীর ১১টি এলাকার নানা বয়সী ৫০০ জনের বেশি মানুষের ফুসফুসের সক্রিয়তার পরীক্ষা বা পালমোনারি ফাংশন টেস্ট (পিএফটি) করা হয়। পিএফটির ফলে দেখা যায়, গড়ে রাজধানীর ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ বাসিন্দা ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে ২২ দশমিক ১৮ শতাংশ পুরুষ ও ২৪ দশমিক ৭২ শতাংশ নারী।
গবেষণাটিতে দেখা যায়, বায়ুদূষণের কারণে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা ও শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রদাহ (সিওপিডি) রোগ বেশি হচ্ছে। বায়ুদূষণ কমাতে রাজধানী ও এর আশপাশের ইটভাটা, যানবাহন ও ট্যানারিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার টন নির্মাণ-বর্জ্য, মেডিকেল-বর্জ্য, বাসাবাড়ির বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর অনেকগুলোই বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। বায়ুদূষণের কারণে শিশুরা নানা রোগ নিয়ে বড় হচ্ছে। দূষণ কমাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। সবুজ ঢাকা গড়তে আগামী দুই বছরে ঢাকায় ৩ লাখ ২৫ হাজার গাছ লাগানো হবে বলে মেয়র জানান।
মানবদেহের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব বিষয়ে জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক বলেন, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনক্সাইড থেকে শুরু করে মার্কারি, লেডের মতো ভারী পদার্থ বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এগুলো ফুসফুসের পাশাপাশি হৃদ্রোগ, যকৃতের সমস্যা ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিইউর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও পরিবেশবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকায় বায়ুদূষণের পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। এ দেশে আন্দোলনরত জনতাকে হটাতে জলকামানের ব্যবহার হলেও ধুলা সরাতে তার কোনো ব্যবহার নেই। সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে পয়োবর্জ্য ওপরে উঠে আসে, যা গ্রীষ্মকালে ধুলায় পরিণত হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে মানুষের নিশ্বাসে প্রবেশ করে।
অনুষ্ঠানে বিইউর চেয়ারম্যান কাজী জামিল আজহার আরবান ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও এর কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
সূত্র-প্রথম আলো
বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম/জেডএম