প্রতারণায় জড়াচ্ছে চীনে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা | BD Times365 প্রতারণায় জড়াচ্ছে চীনে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা | BdTimes365
logo
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:২২
বাংলাদেশে চীনাদের অনলাইন ফাঁদ
প্রতারণায় জড়াচ্ছে চীনে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতারণায় জড়াচ্ছে চীনে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা

সহজ সরল বাংলাদেশীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে চীনা প্রতারক চক্রটি

বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায়। তার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ অংশ চীনে মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যায়। তাদের একটা বড় অংশ চীনে গিয়ে চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং চাইনিজ বিভিন্ন প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। চক্রের মূলহোতা চাইনিজরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় চাইনিজ প্রতারণার ফাঁদ রয়েছে। তারা ভালো বাংলা বা ইংরেজি বলতে পারেন না। তখন তারা চীনে পড়তে চাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এবং  তাদের দিয়ে প্রতারণার কাজটি করছে। অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে, অ্যাপ ও জুয়ার সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাইনিজরা। কারণ প্রত্যেকটি প্রতারণার সাইটের অ্যাডমিন চীনে। সম্প্রতি প্রতারণায় জড়ানো তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ৩০টি ভারতীয় সিমসহ গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানান তিনি। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রাকিবুল ইসলাম রাতুল (২৪), আসাদুজ্জামান রাজু (২৯) ও মামুন হাওলাদার (২৭)। 

গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে ১০ থেকে ১২ হাজার চায়নিজ নাগরিক অবস্থান করছে। তাদের অনেকেই অবৈধভাবে বসবাস করছে। দেশজুড়ে অবস্থান করা এসব চীনারা পেতেছে বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ। আর যেসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়তে গিয়েছে, তাদের মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এই প্রতারক চক্র। ফলে বিভিন্ন অ্যাপস খুলে, জুয়ার সাইট চালিয়ে এবং অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।’

গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগান থানায় এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ও তদন্তের ভিত্তিতে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদের নেতৃত্বে একটি দল ঢাকার বিমানবন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চীনা প্রতারক চক্রের ওই তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।


ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোপূর্বে আমাজন ডটকম, ডারাজ ডটকম বিডি, ফ্লিপকার্ট ডটকমের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির নামে ভুয়া সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই চাইনিজ নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার তদন্ত করতে গিয়ে নতুন করে এ চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রেপ্তার তিনজন অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে অ্যাপ খুলে জুয়ার সাইট চালিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রে জড়িয়েছিলেন তারা।

হারুন অর রশীদ বলেন, কিছু বাংলাদেশি বেনামি সিম তারা সংগ্রহ করে। সেসব দিয়ে বিকাশ, নগদসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে নেয়। এসবের মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে দুই চাইনিজ গাগা ও চিং চং। তারা প্রতারণার জন্য চীনে একটা সার্ভার স্থাপন করেছে। সেখান থেকে চিং চং বিকাশ, নগদসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রতারণা করে। এরপর ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পর্কে ডিবিপ্রধান বলেন, তারা বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনার উদ্দেশে চীনে গিয়ে চাইনিজ ভাষা শিখে প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে চাইনিজরা তাদের বলে যে তারা কিছু অ্যাপস তৈরি করেছে। অ্যাপস ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তাদের সেই কার্যক্রমে কিছু বাংলাদেশি সিম, বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন। স্বল্প সময়ে অবৈধভাবে অধিক উপার্জনের আশায় এ প্রতারণার কাজে যুক্ত হয়ে চাইনিজদের বাংলাদেশি সিম বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সরবরাহ করে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিছু মানুষকে প্রতারিত করার পর তারা এ কাজ অব্যাহত রাখে এবং স্বল্প সময়ে লাখ লাখ টাকা আয় করে।

হারুন বলেন, রাতুল, রাজু, মামুন অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং, অনলাইন ফিন্যান্সিং, বেটিং সাইট, সি-ফাইন্যান্স, লোন অ্যাপস, হানিট্রাপেও সরাসরি জড়িত। গ্রেপ্তারকৃতরা চাইনিজ প্রতারক চক্রের হয়ে বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এ চক্রে দেশি-বিদেশি আরও নানা লোকজন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য মিলেছে। চক্রটি মানুষকে অনলাইনে টাকা উপার্জনের কিংবা পার্টটাইম চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে থাকে। তারা সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় কৌশলে একাধিক ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করে একটি মোবাইল ফোনে ১০০টি বিকাশ অ্যাকাউন্ট তৈরি করে। লালমনিরহাট, জামালপুর, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানের প্রতিনিধিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংগ্রহ করে সাভার ইপিজেডে চাইনিজ প্রতারকের মাধ্যমে মূল পরিকল্পনাকারী গাগা ও চিং চং নামক দুই চাইনিজের সঙ্গে বাংলাদেশি চাইনিজ ছাত্ররা মূল লিঙ্ক হিসেবে কাজ করে। প্রতারণার কাজে তারা ভারতীয় সিম ব্যবহার করে।