মেয়ের মৃতদেহ আগলে মায়ের সাত দিন | BD Times365 মেয়ের মৃতদেহ আগলে মায়ের সাত দিন | BdTimes365
logo
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৪:৩৭
মেয়ের মৃতদেহ আগলে মায়ের সাত দিন
অনলাইন ডেস্ক

মেয়ের মৃতদেহ আগলে মায়ের সাত দিন

সকাল থেকেই দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ প্রতিবেশীরা। শেষ বেলার দিকে গন্ধের উৎস খুঁজতে নেমে প্রতিবেশীরা বুঝতে পারেন বন্ধ ফ্ল্যাটেই কিছু রয়েছে। যার দুর্গন্ধ ভাঙা জানলার ফাঁক দিয়ে আসছে। সন্দেহ হওয়ায় প্রতিবেশীরা খবর দেন পুলিশকে।

পরে পুলিশ এসে ফ্ল্যাটের দরজা খুললে দেখতে পায়, ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে পঁচাগলা এক মৃতদেহ। আর তার সামনে বসে হাত জোড় করে কেঁদে চলেছেন এক বৃদ্ধা। কোনও প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না তিনি।

শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে টালিগঞ্জের নেতাজিনগর এলাকায়। রোববার  ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে সংবাদিটি।

পুলিশ জানায়, মৃতদেহটি একজন নারীর। নাম মাম্পি নাথ (৪৩) । মায়ের নাম জলি নাথ। মা এবং মেয়ে নেতাজিনগরের এক তিনতলা বাসার দোতলায় থাকেন।

প্রতিবেশীরা জানান, জলিদেবীকে মাঝে মধ্যে রাস্তায় দেখা গেলেও পাঁচ বছরে কোনও দিন তাঁর মেয়ে মাম্পিকে দেখা যায়নি।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের অনুমান, অন্তত দিন সাতেক আগেই মৃত্যু হয়েছে মাম্পির।

পুলিশ জানান, বছর দশেক আগে নেতাজিনগরে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করেন জলিদেবীরা। মা-মেয়ে নিজেদের মতোই থাকতেন। পাড়ায় বা নিজেদের ওই বাড়ির অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গেও মিশতেন না। তাঁর স্বামীকেও কোনও দিন দেখা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা আনন্দরূপ ভদ্র বলেন, ‘‘গত পাঁচ দিন ধরে এক বারের জন্য জলিদেবী ঘর থেকে বের হয়নি। পুলিশ আসার পরে দরজা খোলেন।’’

মাস ছয়েক আগে জলিদেবীদের ঘরে আগুন লেগেছিল। তখন পুলিশ ও দমকলকর্মীরা এসে একই ভাবে দরজা খুলেছিলেন বলে জানান প্রতিবেশীরা।

গত জুন মাসে রবিনসন স্ট্রিটের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল দেবযানী দে নামে এক মহিলার কঙ্কাল।

সেসময় তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দিদির মৃত্যু সংবাদ কাউকে না দিয়ে ঘরের মধ্যে ছ’মাস ধরে রেখে দিয়েছিলেন তাঁর ভাই পার্থ দে।

মাস খানেক আগে নৈহাটিতেও ঘটেঠিলো একটি ধরনের ঘটনা। বড় ভাইয়ের মৃতদেহ সৎকার না করে দিন সাতেক বাড়িতে রেখে দিয়েছিলেন ভাই আর বোন।

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনেও এমন ঘটানা ঘটিয়েছিলো ভারতীয় বংশোদ্ভুত এক পরিবার। মৃত স্বামীর দেহ পাঁচ মাস ধরে আগলে রেখে দিয়েছিলেন স্ত্রী। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

নেতাজিনগরের ঘটনার তদন্তকারীরা কর্মকর্তা বলেন, “ঘরের মেঝেতে ছিল মাম্পির দেহ। তাঁর একটি চোখ খোবলানো ছিল। দেহ ফুলে গিয়েছিল। দেহের চারপাশে মাছি আর পোকা কিলবিল করছিল।”

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মা-মেয়ে দু’জনেই মানসিক ভারসাম্যহীন।

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের বলেন, ‘‘মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের সম্পর্ককে বলা হয় ‘সিমবায়োটিক রিলেশন।’ মা এই ক্ষেত্রে সন্তানের থেকে নিজের অস্তিত্বকে আলাদা করে ভাবতে পারেন না। দু’জনের মধ্যে সর্ম্পকের ক্ষেত্রে পৃথক অস্তিত্ব গড়ে না ওঠার জন্যই এই ধরনের সমস্যা হয়।’’

বিডিটাইমস৩৬৫ ডটকম/আরআর/একে