অতিথির সুরের গুঞ্জনে মুখরিত সংস্কৃতির রাজধানী | BD Times365 অতিথির সুরের গুঞ্জনে মুখরিত সংস্কৃতির রাজধানী | BdTimes365
logo
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৯:৫১
অতিথির সুরের গুঞ্জনে মুখরিত সংস্কৃতির রাজধানী
নবিউল ইসলাম বাপ্পি, জাবি প্রতিনিধি

অতিথির সুরের গুঞ্জনে মুখরিত সংস্কৃতির রাজধানী

সবুজের অভয়ারণ্যে সৃষ্টিকর্তা যেন একটু বেশিই সৌন্দর্য দিয়েছেন দু’হাত ভরে। নইলে প্রকৃতির এই চির সবুজ রাজ্যে লালমাটি ভেদ করে এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া সরু জলাশয়, কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা ক্যাম্পাস, বর্ণিল ডানা মেলা প্রজাপতির আনাগোনা আর লাল শাপলার গালিচা বিছানো জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখির কলতান আর কোথায় দেখা মিলবে।এই নৈসর্গিক সমাহার খুবই বিরল।

সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস মুখরিত হয়েছে নানা প্রজাতির অতিথি পাখির গুঞ্জনে। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে অতিথি পাখিকে ঘিরে এক আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। 

জাহাঙ্গীরনগরের শীত আর অতিথি পাখি যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শীতের সৌন্দর্য্যে বাড়তিমাত্রা যোগ করতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন ঘটেছে বিচিত্র সব অতিথি পাখির।

লাল শাপলার ফাঁকে ফাঁকে এসব অতিথি পাখির কিচির-মিচির ডাক মুখরিত করে তুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস। এসব পাখি ক্যাম্পাসের লাল শাপলা শোভিত জলাশয় গুলোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আগের তুলনায় বহুগুণ।

উপযুক্ত পরিবেশ আর নিরাপদ আশ্রয়ে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও সেই চির চেনা অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে জাবি ক্যাম্পাস। এসব অতিথি পাখিরা নির্ভাবনায়  মেতে উঠেছে খোশগল্প আর জলকেলীতে। কেউ আবার ব্যস্ত ডুব সাঁতারে।আবার জলাশয়ের কোথাও তারা জুটিবদ্ধ ভাবে নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে ।কখনো তারা চক্রাকারে উড়ে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসের মুক্ত আকাশ জুড়ে। এখন ক্যাম্পাসবাসির ঘুম ভাঙছে অতিথি পাখির কলকাকলিতে । তাদের অবিরাম উড়াওড়ি, জলকেলি, আর জলাশয়ের পানিতে খুঁনসুঁটি উপভোগ করতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য নানা বয়সী পাখি প্রেমিক দর্শনার্থী ও সৌন্দর্য পিপাসুরা।

রাজধানীর মীরপুর-২ থেকে স্বপরিবারে পাখি দেখতে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নাজমুল ইসলাম রানা বিডিটাইমস৩৬৫কে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি পাখির বিচিত্র সমাহার আমি ক্যাম্পাস জীবন থেকেই শুনে আসছি। এর আগে ছাত্র অবস্থায় অনেক বার আসা হয়েছে। এখন পরিবার এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে এসে আরও অনেক ভাল লাগছে।

প্রতি বছর উত্তরের শীত প্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারত থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি আসে। প্রতিবছর এ সময় সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের উত্তরে শুরু হয় প্রচন্ড শীত ও তুষারপাত। বাঁচার তাগিদে এরা ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ সহ সংলগ্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। দেশের হাতে গোনা যে কয়েক টি এলাকায় এরা ক্ষণস্থায়ী আবাস গড়ে, তারমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অন্যতম। প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের  প্রথম দিকে এসব অতিথি আসলেও এবার এসেছে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে। আবার মার্চের শেষে এরা আপন ঠিকানায় ফিরে যাবে বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছর ২৪৪ প্রজাতির অতিথি পাখির মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসে ২২-২৫ প্রজাতির পাখি। তবে ধারণা করা হচ্ছে এ বছর অতিথি পাখির প্রজাতির সংখ্যা কমে ১২-১৪ হয়েছে। প্রতি বছর যেসব পাখি অতিথি হয়ে আসে তার মধ্যে অধিকাংশই হাঁস জাতীয় ও পানিতে বাস করে। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, নাকতা, পাতিতারা, খঞ্জনা, ধুপানি, লালমুড়ি, গয়ার, ফ্লাইফেচার, গার্গেনী, ছোটজিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক, পাতারী, মানিক জোড়, কলাই, ছোটনগ, জলপিপি, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি অন্যতম। জাবিতে ছোট বড় ১৭ টি জলাশয় থাকলেও প্রশাসনিক ভবনের সামনের ও পেছনের জলাশয় দুটোতে অতিথি পাখির আনাগোনা বেশি দেখা যায়।

এদিকে অতিথি পাখির নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। জলাশয়গুলোর চারদিকে কাটা তারের নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। পাখি প্রদর্শনের নির্দেশনা সহ চালানো হচ্ছে সতকর্তা মূলক প্রচারণা। 

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন তুহিন বিডিটাইমস৩৬৫কে বলেন, অতিথি পাখি প্রাতি বছরই আসে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক এবং প্রসাশনের পুরাতন একটি লেকের সংস্কার করারফলে এ বছর অতিথি পাখির সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন লেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা এবং নতুন বিলবোর্ড লাগানো উচিৎ। তা না হলে অতিথিদের শব্দ করা, ছবি তোলা ইত্যাদি সমস্যার কারনে পাখিরা ভয় পাবে এর ফলে পাথির সংখ্যা কমে যাবে বলে তিনি আশংকা করেন।

অতিথি পাখিদের সংরক্ষণে প্রতি বছরই প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় পাখি মেলা। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম/জেড