পার্বত্য শান্তিচুক্তির দেড় যুগ | BD Times365 পার্বত্য শান্তিচুক্তির দেড় যুগ | BdTimes365
logo
আপডেট : ২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১২:৪৩
পার্বত্য শান্তিচুক্তির দেড় যুগ
অনলাইন ডেস্ক

পার্বত্য শান্তিচুক্তির দেড় যুগ

ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তির দেড় যুগ পূর্তি হচ্ছে আজ বুধবার (০২ ডিসেম্বর)।  পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের কথা বলে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতৃত্বে পাহাড়ে শুরু হয় সশস্ত্র আন্দোলন। প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে রক্তস্নাত সবুজ পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, বারুদের গন্ধ আর চরম অশান্ত পরিস্থিতির পর সংগঠনটি ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয় জেএসএসের।

চুক্তিতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও বর্তমান আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আনুষ্ঠনিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করেন সন্তু লারমা। আর খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামসহ চারটি স্থানে অস্ত্র সমর্পণ করেন শান্তি বাহিনীর এক হাজার ৯৬৮ জন সদস্য। পাহাড়ে আসে শান্তির বারতা। শুরু হয় চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া।

তবে ১৮ বছর পরও চুক্তির অনেক ধারা বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ জনসংহতি সমিতির। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগও প্রকাশ করছেন আদিবাসী নেতারা। জেএসএস এর (এমএন লারমা) সভাপতি সুধাসিন্ধু খীসার অভিযোগ, দীর্ঘ ১৮ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের কোনও অগ্রণী ভূমিকা নেই।

সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, সরকার নাগরিকদের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছর পার হয়ে গেলেও সেই চুক্তি বাস্তবায়ন না করে সরকার প্রতারণা করছে।

তবে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার দেওয়া এক বাণীতে বলেন, ‘এই চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা। দেশের অখণ্ডতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে একটি মহান পদক্ষেপ হিসেবে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বাঙালি-পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। খুন, রাহাজানি, অত্যাচার-অবিচার, ভূমি জবরদখল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এ অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বিবাদমান সব পক্ষের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা করি। সবাইকে শান্তির পথে ফিরিয়ে আনি। শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সব খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। উপজাতি নৃগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি সমুন্নত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ভূমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য জেলাসমূহের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা ও পর্যটন শিল্পের প্রসারেও তার সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে।

বাণীতে তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে আজ পার্বত্য জেলাসমূহ কোন পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সম-অংশীদার।’

বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম/এসএম/