আপডেট : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৩:০৭

তেতাল্লিশ বছর পর ইরাকে সুন্দরী প্রতিযোগিতা

বিনোদন ডেস্ক
তেতাল্লিশ বছর পর ইরাকে সুন্দরী প্রতিযোগিতা

বলরুমে তখন চাঁদের হাট। দেশের সেরা সুন্দরীরা একসঙ্গে একই মঞ্চে, রয়েছেন দেশ-বিদেশের সাংবাদিকরাও। কুড়ি বছরের তরুণী যখন হাসিমুখে পাথর বসানো ঝলমলে মুকুটটা পরলেন, হাততালির ঝড় উঠল গোটা বলরুম জুড়ে।

দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছর পর বিরল এই দৃশ্যের সাক্ষী হল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইরাক। রাজধানী বাগদাদে আয়োজন করা হয়েছিল ‘মিস ইরাক’ সুন্দরী প্রতিযোগিতার। আর তাতে জয়ের মুকুট পরেছেন দেশটির মডেল শায়মা আবদেলরহমান।

ইরাকের কিরকুক শহরের বাসিন্দা শায়মা। ধূসর নয়না এই অনিন্দ্য সুন্দরী ‘মিস ইরাক’ খেতাব জিতে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত। কিরকুকের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্রী তিনি।

বার্তাসংস্থা এএফপি, মধ্যপ্রাচ্যের সুপ্রাচীণ দৈনিক আল-আহরাম, আমেরিকার হাফিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অত্যন্ত যত্নসহকারে ছাপিয়েছে এই সুন্দরী প্রতিযোগীতার সংবাদ। ১৯৭২ এর পর আর এই ধরনের প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়নি দেশটিতে।

অনুষ্ঠান শেষে মিস ইরাকের সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িকও ছিল চোখে পড়ার মতো। সাম্প্রতিক অতীতে ইরাকের মতো অতি রক্ষণশীল সমাজে এমন দৃশ্যের কথা ভাবা যেত না।

হাতা কাটা, হাঁটু পর্যন্ত লম্বা গাউন পরে সুন্দরীরা একের পর এক রাউন্ডে বিচারকদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন, দর্শকদের কেউই তেমন অস্বস্তি বোধ করলেন না। বরং শায়মা যখন পুরস্কার নিচ্ছেন, দর্শকাসনে পিছনের সারিতে বসা ইরাকি যুবকদের তাঁর নামে জয়ধ্বনি দিতে দেখা যায়।

দেশের সেরা সুন্দরীর খেতাব জেতা শায়মা সাংবাদিকদের সামনে যথেষ্ট সপ্রতিভ ছিলেন।

বললেন, “ইরাক যে এভাবে এগোচ্ছে, তা দেখে আমি ভীষণ খুশি। আমার মনে হয়, এই অনুষ্ঠান গোটা দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে।”

এখানেই থেমে থাকেননি শায়মা। জানিয়েছেন, তাঁর খ্যাতিকে ব্যবহার করে ভবিষ্যতে সারা দেশে শিক্ষা বিস্তারে সাহায্য করতে চান তিনি।

শুধু বিজয়িনী নন। এমন কাজ করতে আগ্রহী প্রতিযোগিতার বাকি অংশগ্রহণকারীরাও।

উদ্যোক্তারা জানান, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা পর্বে বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়েছিল আট জনকে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন বেশ কয়েকটা সমাজকল্যাণমূলক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়েছে ওই সব মডেলকে। সেখানেই অনেকে জানিয়েছেন, উন্নত ইরাক গঠনে কিভাবে প্রশাসনকে সাহায্য করতে চাইছেন তারা।

এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের অনেকেই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক তরুণীতো নিয়মিত এমন আয়োজন দেখতে চাইলেন। তার সুরে সুর মেলালেন দেশটির মানবাধিকার কর্মী হানা এডওয়ারও।

প্রতিযোগীতার উদ্যোক্তাদের অন্যতম হুমাম আল-ওবেইদি বলেন, “কিছু মানুষ মনে করেন আমরা বাঁচতে জানি না। জীবনকে ভালবাসি না। তাদের এই জবাবটা দেওয়া দরকার ছিল।”

দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের স্পষ্টই বলেছেন ওবেইদি। গত মার্চে দেশের প্রথম ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করেছিলেন সেনান কামেল। এ বছরের প্রতিযোগিতার শিল্প নির্দেশনাও তাঁর।

সেনান বলেন, “আমরা দেখাতে চাই গোটা দুনিয়া ইরাকের কণ্ঠস্বর শুনুক। দেখাতে চাই, আমরা এখনও বেঁচে আছি। আর আমাদের হৃদয়ও ধুকপুক করে।”

বিডিটাইমস৩৬৫ ডটকম/এএইচএ/একে

উপরে