জামিনে মুক্তি পেয়ে ধর্ষিতার বাড়িতে ধর্ষকের নেচে গেয়ে উল্লাস | BD Times365 জামিনে মুক্তি পেয়ে ধর্ষিতার বাড়িতে ধর্ষকের নেচে গেয়ে উল্লাস | BdTimes365
logo
আপডেট : ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০১:১৮
ভাড়া করা হয় ব্যন্ড পার্টি
জামিনে মুক্তি পেয়ে ধর্ষিতার বাড়িতে ধর্ষকের নেচে গেয়ে উল্লাস
নিজস্ব প্রতিবেদক

জামিনে মুক্তি পেয়ে ধর্ষিতার বাড়িতে ধর্ষকের নেচে গেয়ে উল্লাস

জামিন পেয়ে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ব্যন্ড পার্টি নিয়ে ধর্ষিতার উঠোনে নাচে গানে মত্ত হয়ে বিজয় উল্লাস প্রকাশ করেছেন এক ধর্ষণ মামলার আসামী।  ধর্ষিতা একজন শিশু। গতকাল এমন ঘটনাই ঘটেছে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের গোপালপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে ছাত্রীটি (১০)। স্কুলপর্যায়ে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট স্ট্রাইকার হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও পেয়েছে।

শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে আলেপ শেক (৬০)। এরপর ধর্ষণচেষ্টার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে আলিপ শেক ওই শিশুর বাড়ি গিয়ে নেচে-গেয়ে আসেন।

গ্রামবাসী জানান, বৃহস্পতিবার ধর্ষণচেষ্টা মামলার একমাত্র আসামি আলেপ শেক আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পেয়েই গলায় মালা ঝুলিয়ে ব্যান্ড পার্টির বাজনা বাজিয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করেন তিনি ও তার অনুসারীরা। ওই শিশুর মা এবং মামলার বাদীর বাড়ির আঙিনায় গিয়ে আসামি ও তার লোকজন নেচে-গেয়ে তোলপাড় করে।

গোপালপুর থানা সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে গত ২৪ জুলাই ধর্ষণের চেষ্টা চালায় গ্রামের মুদি দোকানি আলেপ শেক। তখন শিশুর কান্নার শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আলেপ শেক পালিয়ে যান। ওই দিন বিকেলে থানায় মামলা হলে পুলিশ আলেপ শেককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পান তিনি।

মামলার বাদী এবং শিশুর মা শনিবার থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানান, গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাত ৯টায় আলেপ শেক গলায় মালা পরিহিত অবস্থায় ব্যান্ড পার্টি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে। ব্যান্ড পার্টির সঙ্গে তার আত্মীয়সহ বেশ কয়েকজন উৎসুক মানুষ যোগ দেয়। তারা নেচেগেয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করে। একপর্যায়ে আলেপ শেক দলবল নিয়ে বাদীর বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে নাচানাচি শুরু করে। পাশাপাশি গালিগালাজ ও মারপিটের হুমকি দেয়। এ অবস্থায় দিনমজুর বাবা-মা অসহায় শিশুটিকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা পুলিশের সহযোগিতা চান।

ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আলীম হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ব্যান্ড পার্টি এবং কিছু মানুষের কোলাহলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। শিশুটির পরিবার খুবই নিরীহ। তারা এখন আতঙ্কে আছে। আসামি খারাপ প্রকৃতির লোক।

একই গ্রামের বাসিন্দা সাহার আলী, ইব্রাহীম খলিল ও মকবুল হোসেন জানান, শিশু নির্যাতনের মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে গলায় মালা জড়িয়ে ব্যান্ড পার্টির বাদ্যের তালে নেচেগেয়ে এমনভাবে আনন্দ করাটা কোন সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে না। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

ব্যান্ড পার্টির প্রধান কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতন আমাদের ব্যান্ড পার্টিকে তিন হাজার চার শ টাকা ভাড়ায় হায়ার করেন। রাত ৯টায় আমরা ওই গ্রামে যাই। রাত ১২টা পর্যন্ত সারা গ্রাম ঘুরে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে সকলকে আনন্দ দিই। জেল থেকে আসামি বের হলে যে বাজনা বাজায় এটা প্রথম করলাম।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ধর্ষণচেষ্টা মামলায় জামিন পেয়ে কোনো আসামি এভাবে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে আনন্দ উৎসব করে বলে আমার জানা নেই। এতে ভিকটিম শিশুটি আরো নিরাপত্তাহীনতা এবং সম্মানহানির অবস্থায় আছে। আমরা অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।