মানসিক চাপ কমাতে নিজের অন্তেষ্টিক্রিয়া! | BD Times365 মানসিক চাপ কমাতে নিজের অন্তেষ্টিক্রিয়া! | BdTimes365
logo
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৩:৫২
মানসিক চাপ কমাতে নিজের অন্তেষ্টিক্রিয়া!
বিডিটাইমস ডেস্ক

মানসিক চাপ কমাতে নিজের অন্তেষ্টিক্রিয়া!

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় দক্ষিন কোরিয়ার মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। আর এর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মানসিক অবসাদ ও কর্মক্লান্তি।

কোরিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিকরা প্রায়শই কাজের চাপগস্ত আবসাদের অভিযোগ করেন। তাদের এই কাজের চাপ প্রশমিত করার জন্য কোরিয়ার কিছু কোম্পানি চালু করেছে এক অভিনব আয়োজন। কর্মীদের জীবনের প্রতি ভালবাসা বাড়াতে কম্পানিগুলো কর্মীদের অন্তেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করে।

সিউলের একটি নিয়োগ প্রদানকারী কোম্পানির কিছু লোক তাদের নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করেছে। সাদা রঙের গাউন পরে তারা ডেস্কে বসে শেষ চিঠি লেখে প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে। চিঠি লিখতে লিখতে অনেকেই আবেগে অঝোরে কাঁদতে থাকে। একসময় কান্না মুছতে মুছতে তাদের চিঠিগুলি টিস্যু হয়ে যায়।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে তারা কাঁঠের তৈরি করা কফিনের মধ্য নিজের ছবি জড়িয়ে শুয়ে থাকে।

শেষকৃত্যের এমন অনুষ্ঠান তাদের জীবনের মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়।

কফিনের মধ্যে ঢোকার আগে শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করাদের বিভিন্ন দুরদশাগ্রস্থ মানুষের ভিডিও দেখানো হয়। যেমন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা কিভাবে শেষ জীবন পার করে। কিছু মানুষ যারা অঙ্গছাড়াই সাঁতার শেখে।

শিং ইয়ং মুন যে অনেক দিন ধরেই শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে তার মতে, এ ধরণের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে তারা তাদের সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারে এবং তারা যেন তাদের জীবনকে সহজভাবে গ্রহন করতে পারে।

এধরণের সেশনগুলিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের কোম্পানির কর্মীদের পাঠিয়ে থাকে।

শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের আয়োজনকারী এক কোম্পানির প্রেসিডেন্ট পার্ক চুন ওয়ং বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠান সবসময় কর্মীদের অনুপ্রাণিত করে তারা যেন তাদের পুরাতন চিন্তা পরিহার করে।”

পার্ক চুন আরো বলেন, “আমি মনে করি কফিনের ভিতর তাদের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা তাদের তাদের মনকে সম্পূর্ণ প্রফুল্ল করবে এবং তাদের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটবে।”

কফিন থেকে বেরিয়ে চাও ইয়ং বলেন, “এখন আমি নতুনভাবে জীবন গড়ার চেষ্টা করব।

“আমি অনুভব করছি আগে আমার অনেক ভুল ছিল। আমার কাজে আরো উৎসাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার পরিবারের সঙ্গে আরো সময় ব্যয় করা উচিত।”

কোম্পানির প্রেসিডেন্ট হিসেবে পার্ক চুন ওয়াংয়ের বিশ্বাস একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি তার কর্মীদের প্রত্যেক সকালে শেষকৃত্যে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

শেষকৃত্যে অংশগ্রহনের সময় সবাই একসঙ্গে “স্টেসিং এক্সসারসাইজ” করে, করে জোরে জোরে চিৎকার-চেচামেচি।

তাদের একসঙ্গে উচ্চস্বরে চিৎকার, গাঁধার মতো একসাথে হাসি। এটা দেখতে বিশ্রী লাগতে পারে অনেকেরই।

কোরিয়ার একজন মহিলা এমন কান্ড দেখে বলেন, “প্রথমে তাদের একসঙ্গে হাসি আমার বিশ্রী লেগেছে এবং আমি বিস্মিত হয়েছি তাদের এমন হাসি দেখে।

“আমি মনে করি এটার একটা ইতিবাচক দিক আছে। তাদের একটা ছোট হাসি অফিসের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।”

দক্ষিন কোরিয়ার মতো আত্মহত্যাপ্রবণ দেশে এমন হাসির দরকার আছে। শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা দক্ষিন কোরিয়াতে বেশি। কোরিয়ার অনেক শ্রমিক ‘ট্রেজেন্টেনিজম’ নামক এক ধরনের মানসিক রোগে ভোগেন।

সিম্পসন নামে একজন স্পেসালিস্ট মনে করেন, এ ধরনের রোগে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত আফিসের সময় পার হয়ে যাবার পরও ভালো পারফরমেন্সের জন্য বেশি সময় অফিসে থাকেন।

দক্ষিন কোরিয়ার নিউরো সাইকাট্রিক এসোসিয়েসন এর মতে কোরিয়াতে এক চতুর্থাংশ মানুষ উচ্চ মাত্রায় মানসিক চাঁপে ভুগে থাকেন।   

গত বছর সিউল সিটি কর্মক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের জন্য কিছু নিয়ম জারি করে তা হলো কাজের মাঝখানে কিছু সময় ঝিমিয়ে নেয়া। যদিও সিউল সিটির এ ধরনের পদক্ষেপ তেমন পরিবর্তন আনতে পারেনি। কেননা এ ক্ষেত্রে কর্মীদের সে সময় পুশিয়ে দিতে হয় এক ঘন্টা আগে আসতে হয়, না হয় পরে বেরতে হয়।

তবে এমন মেকি অন্তেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করে যে দেশে কর্মচাপ বা মানসিক চাপ কমাতে হয় সেদেশে চাপটা যে একটু বেশি তা আর অস্তীকার করার উপায় নেই। তবে এই ধরনের আচার তাদের কতটা চাপমুক্ত করবে, বা আত্মহত্মার প্রবণতা করতটা কমাবে তা অবশ্য এখনই স্পষ্ট নয়।

 

বিডিটাইমস ৩৬৫ ডটকম/আরআর/একে