আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২১:৩৫

যৌবন হারাচ্ছে বাঁশখালী ইকোপার্ক !

মোঃ সাইফুল ইসলাম, বাঁশখালী প্রতিনিধি
যৌবন হারাচ্ছে বাঁশখালী ইকোপার্ক !

উঁচু-নিচু পাহাড়, স্বচ্ছ পানি সমৃদ্ধ লেক, বনাঞ্চল বেষ্টিত নয়নাভিরাম দৃশ্যবলী সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক নৈসর্গের লীলাভূমি বাঁশখালী ইকোপার্ক। শিক্ষা, গবেষণার, জীববৈচিত্র রক্ষা, ইকোট্যুরিজম ও চিত্তবিনোদনের নিমিত্তে গড়ে ওঠা পার্কটিতে এক সময় শত শত পর্যটকের ভীড় জমত! কিন্তু বাস্তবত চিত্র ঠিক তার উল্টো।

বুধবার, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পুরো পার্ক এলাকা মিলে ৩০ জন দর্শনার্থীও ছিল না। পিকনিক সেট, দ্বিতল রেস্ট হাউস, ১২২ মিটার ঝুলন্ত সেতুর রুগ্নদশা জানান দেয় ভাল নেই পার্কটি! কংক্রিট নির্মিত শাবের ছাতা, বেঞ্চে ময়লা থাকায় পর্যটকদের বসার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বাঁশখালীর প্রধান সড়ক থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ি এলাকায় যেতে হয় পার্কটি দেখতে। যাওয়ার পথরে কাঁটা হয়ে উঠেছে এখানকার সড়কটি।  ফলে পর্যটকরা শুরুতেই খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হন। যার কারণেও পর্যটক কমেছে বলে মনে করেন স্থানীয় বনবিট কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন।

যে লেকগুলো এক সময় পর্যটক আকৃষ্ট করত সেগুলোতে এখন পানি নেই। বামের ছড়ায় নির্মিত ১০ কিলোওয়াট মাইক্রো হাইড্রো বিদ্যুৎ প্লান্ট ২০০৬ সালে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠার দুই বছর পরই প্রবল বর্ষণে ভেঙ্গে যায়। এখন সেটিও বিকল।

জানা যায়, পার্কটিতে ৮৫ প্রজাতির পাখি, ৪৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। কিন্তু পুরো পার্ক ঘুরলেও তেমন পাখি ও প্রাণীর সাড়া মেলেনি! স্থানীয়দের মতে, পূর্বে হাতি ছিল এখন সেগুলো দেখা যায় কালেভদ্রে।

১৯৯৭ সালের উদ্ভিদ জরিপ মতে, ৩১০ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছিল। যার মধ্যে ১৮ প্রজাতির দীর্ঘ বৃক্ষ, ১২ প্রজাতির মাঝারি বৃক্ষ, ১৬ প্রজাতির অর্কিড, ইপিফাইড ও ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ ছিল। কিন্তু পার্কে দীর্ঘ বৃক্ষের দেখা তেমন মেলে না।

দিন দিন পার্কটি স্থানীয়দের দখলে চলে যাচ্ছে। গাছ কেটে নষ্ট করা হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। পার্কের বিভিন্ন স্থান থেকে মাটিও সরিয়ে নিচ্ছে অনেকে। এসকল ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে পার্কে কর্মকর্তাদের কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে চুনতী অভয়ারণ্যের জলদী লেকে ১ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাশঁখালী ইকোপার্ক। ২০০৬-০৭ থেকে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ পরিচালিত হয়েছে। তবে বন ও বন্যপ্রাণী আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, স্থানীয় ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম বন্ধ করা না গেলে হয়ত আর কোনদিনই যৌবন ফিরে পাবে না ইকোপার্কটি। ফলে সরকার হারাবে কোটি কোটি টাকার অমূল্য সম্পদ।

বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম/জেডএম

উপরে